কি কারণে কিডনিতে পাথর তৈরী হয়, সে সম্বন্ধে এখনো সম্পূর্নভাবে জানা যায়নি। তবে প্রস্রাবে বিভিন্ন ধরনের স্ফটিক বা ক্রিস্টাল থাকে। এই স্ফটিকগুলো স্তরে স্তরে জমে গিয়ে পাথর তৈরী করে। প্রস্রাবে স্ফটিকের পরিমাণ যে সকল কারণে বাড়ে, তার মধ্যে রয়েছে –

i) যাদের বংশে কিডনিতে পাথর সৃষ্টির রোগ রয়েছে। যেমন, যাদের প্রস্রাবে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম, ইউরিক এসিড, সিস্টিন, অক্সালেট ইত্যাদি নির্গত হয়।

ii) খাদ্যনালীর বিভিন্ন রোগে, বিভিন্ন ক্যান্সার জাতীয় রোগে এবং খাবারের উপাদান থেকে।

অপরদিকে ধারণা করা হয়, প্রস্রাবের মধ্যে পাথর নিরোধক পদার্থ থাকে। কারো কারো ক্ষেত্রে এই পাথর নিরোধক পদার্থ থাকে, আবার কারো থাকে না। এই কারণেই কারো মধ্যে পাথর সৃষ্টির প্রবণতা বেশী আবার কারো কম। এই ধরনের পাথর নিরোধক পদার্থের মধ্যে রয়েছে – সাইট্রেট, পাইরোফসফেট, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি।

এছাড়াও, প্রস্রাবে পানির পরিমাণ কম অথবা স্ফটিক সৃষ্টিকারী পদার্থের পরিমাণ বেশী হলে কিডনিতে পাথর তৈরী হতে পারে। প্রস্রাবে জলীয় অংশ বেশী থাকলে স্ফটিক দ্রবীভূত হয়ে যায়, ফলে পাথর সৃষ্টি হয় না। কিন্তু যদি কোন কারণে প্রস্রাবে জলীয় ভাগ কমে যায়, তখন পাথর তৈরী হতে পারে। যে সমস্ত কারণে প্রস্রাবে জলীয় অংশ কমে যায়, তা হলো –

i) কম পানি পান করলে;

ii) প্রচুর পরিমাণে পানি শরীর থেকে বেড়িয়ে গেলে;

iii) প্রচন্ড গরমে বসবাস করলে, যেমন মধ্যপ্রাচ্যে;

iv) বৃদ্ধ মানুষের ক্ষেত্রে, যারা দীর্ঘদিন বিছানায় শায়িত এবং পানি কম পান করেন;

v) যারা প্রচুর কায়িক পরিশ্রম করে কম পানি পান করেন।

কিডনির পাথর প্রতিরোধঃ মূলত খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং লাইফস্টাইলের পরিবর্তন আপনাকে কিডনিতে পাথরের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। এক্ষেত্রে নিম্নের উপায়গুলো অনুসরণ করুন –

i) প্রতিরোধের পূর্বশর্ত হল প্রচুর পরিমানে পানি পান করা। মনে রাখতে হবে, প্রস্রাবের রঙ যেন পানির মতো হয়।

ii) আগে বলা হতো, ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খেলে ক্যালসিয়াম পাথর বেশী হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় তা ভূল প্রমাণিত হয়েছে। তবে যাদের কিডনিতে একবার পাথর ধরা পড়েছে, তাদের অপ্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ও ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।

iii) মাংস, মাছ ও পোল্ট্রি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে।

iv) খাবারের সাথে অতিরিক্ত লবণ খাবেন না।

v) ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির প্রস্রাব ও রক্ত পরীক্ষা করে পাথর সৃষ্টি সম্পর্কে আগাম অনুমান করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × two =